প্রকাশিত: Fri, Aug 25, 2023 11:23 PM
আপডেট: Fri, May 9, 2025 5:03 PM

১]বাংলাদেশের নির্বাচনে ‘ভারত ফ্যাক্টর’ [২]এ নিয়ে অনর্থক উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ দেখি না: মতিয়া চৌধুরী [৩]দিল্লি ঢাকার বন্ধু না হয়ে শুধু একটি দলের বন্ধু হয়েছে: গয়েশ^র রায় [৪]ভারতকে শত্রু ভেবে এখানে রাজনীতি করা সম্ভব নয়: মুজিবুল হক চুন্নু

ইকবাল খান: [৫] আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে  দেশের রাজনীতিতে চলছে নানা অনুমান ও বিশ্লেষণ। ভারত কি বরাবরের মতোই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ নেবে, নাকি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে? বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। অন্যদিকে আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকারকে বারবার তাগাদা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একটি ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। যেখানে বলা হয়েছে - বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে তাদের ও পরিবারের সদস্যদের আমেরিকার ভিসা মিলবে না। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

[৬] এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের অবস্থানের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। কারণ ভারত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। শেখ হাসিনার সরকারের উপর চাপ কমাতে ভারত কী ধরনের ভূমিকা নেয় সেটির দিকে অনেকের দৃষ্টি রয়েছে।

[৭] ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের পরেও ভারত আওয়ামী লীগ সরকারকে জোরালো সমর্থন দিয়ে গেছে। ভারতের সমর্থনের কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব বিগত দুটি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রকাশ্যে জোরালো আপত্তি তোলেনি।

[৮] সম্প্রতি ভারতের একটি পত্রিকায় খবর এসেছে যে, শেখ হাসিনা সরকারের ‘পক্ষ নিয়ে’ যুক্তরাষ্ট্রকে কূটনীতিক বার্তা দিয়েছে ভারত। ভারত সত্যিই এ ধরনের বার্তা দিয়েছে কি না, সেটি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে নিশ্চিত করা যায়নি।

[৯] কিন্তু এ খবর প্রকাশের পর বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী প্রতিক্রিয়া এসেছে।

[১০] নির্বাচনকে ঘিরে মার্কিন ভিসানীতিসহ বিভিন্ন তৎপরতাকে স্বাগত জানালেও ভারতের অবস্থান নিয়ে খবর প্রকাশিত হবার পরে আপত্তির সুর উঠেছে বিএনপিতে। কারণ হিসেবে দিল্লির সর্বশেষ তৎপরতা এবং অতীতের ভূমিকা সামনে আনেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

[১১] এ প্রসঙ্গে গয়েশ্বর রায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং-এর ঢাকা সফর এবং জাতীয় পার্টির তৎকালীন নেতা এইচ এম এরশাদের সাথে বৈঠকের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। 

[১২] গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মনে করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত ভারসাম্য রক্ষা করছে না। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক দেশের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বের সঙ্গে ভারতও একই সুরে কথা বলবে। এটাই আমার ধারণা ছিল। তাইলে হয়তো বা আমাদের দেশের মানুষ ভোটাধিকার ফেরত পাইতে সহজ হইতো।

[১৩]  গয়েশ^র অভিযোগ করেন, ভারত বাংলাদেশের বন্ধু না হয়ে শুধু একটি দলের বন্ধু হয়েছে। তার ভাষায়, তারা একটা দলের বন্ধু। একজন ব্যক্তির বন্ধু। এ অবস্থানটা কোনোভাবেই জনগণের জন্য কাম্য না। ভারত তো চায় আজীবন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক, যেভাবে খুশী, এটা তো সুস্পষ্ট। 

[১৪] অন্যদিকে নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এক ধরনের হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতের অবস্থান সরকারি দলের জন্য অনেকটা ‘স্বস্তির’ বলেই মনে হচ্ছে।

[১৫] সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমেরিকা বৃহৎ শক্তির অংশ এবং ভারতও এখন কারো চাইতে কম যায় না। ভারত তো গণতন্ত্রের বাইরে কথা বলে নাই, কাজেই এইটা নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তিত হওয়ার কী আছে? যারা নির্বাচন ছাড়া অন্য খেলা খেলে, তাদের কথা আমরা বরং সন্দেহের চোখে দেখব। 

[১৬] মতিয়া চৌধুরী বলছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ভারত নিয়ে এই মুহূর্তে সন্দেহের কোন কারণ দেখছেন না মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, অনর্থক উদ্বিগ্ন হওয়ার বা বিচলিত হওয়ারও কোনো কারণ দেখি না। বা এতে বাড়তি উৎফুল্ল হবারও কোনো কারণ দেখি না।

[১৭] জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এটা বাস্তব যে; বাংলাদেশের রাজনীতির বিষয়ে ভারতের একটা স্বার্থ থাকতেই পারে। কারণ তারা নিকটতম প্রতিবেশি এবং তিন দিকেই ভারত বেষ্টিত। সেখানে ভারত চাইবেই যে বাংলাদেশে যে সরকারে থাকুক তাদের সাথে একটা সুসম্পর্ক থাকুক।

[১৮] জাপা নেতা বলেন, সীমান্তের বিষয় আছে, আইনশৃঙ্খলার বিষয় আছে এবং কৌশলগত বিষয় আছে। এসব বিষয় নিয়ে ভারতের যেমন স্বার্থ আছে, বাংলাদেশেরও স্বার্থ আছে। এ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ভারত তার নিজস্ব রাজনৈতিক কারণে এবং কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের বিষয়ে চিন্তা করতে পারে। 

[১৯] মুজিবুল হক চুন্নু মনে করেন, বাংলাদেশে রাজনীতি করতে গেলে ভারতকে শত্রু ভেবে এখানে রাজনীতি করা বা ক্ষমতা চালানো সম্ভব নয়। 

[২০] বিবিসি বাংলা আরো জানায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ভারতের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগের বিষয়টি গোপন কিছু নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি পর্যায়ে কিংবা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ পর্যায়ের সফরগুলোতেও দলীয় প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকেও আলোচনা হয়ে থাকে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ভারত সফর করেছেন।

[২১] বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করার তাগাদা আছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকেও। তবে শেষ পর্যন্ত ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ভূমিকা নেয় সেদিকেই দৃষ্টি সব রাজনৈতিক দলের। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব